বিশেষ প্রতিনিধি:

গত ৫ আগষ্টের সরকার পরিবর্তনের পর দেশের থানা আর আদালত চত্বর দীর্ঘদিনের বঞ্চিত আর নির্যাতিত মানুষগুলোর ক্ষোভ প্রকাশের অন্যতম একটি স্থানে পরিণত হয়েছে। পতিত সরকারসহ আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত কর্মকর্তা থেকে শুরু করে নেতাকর্মীরা থানা এবং আদালত চত্বরেও রেহাই পাচ্ছিলেন না বঞ্চিতদের জুতা-পঁচা ডিম নিক্ষেপের ক্ষোভ থেকে। আর এমন পরিস্থিতিতে বুধবার কক্সবাজারে ঘটেছে ব্যতিক্রমধর্মী এক ঘটনা।

কক্সবাজারের থানা এবং আদালত চত্বরে গতকাল বুধবার সমবেত হয়েই প্রচুর সংখ্যক মানুষ অঝোরে কেঁদেছেন গ্রেফতার হওয়া তৃণমূলের এক ব্যতিক্রমধর্মী রাজনীতিক নেতার জন্য। আদালত চত্বরে বিকালে শত শত নারী-পুরুষ চোখের পানিতে বুক ভাসিয়ে কারাগারের পথে এ নেতাকে বিদায় জানিয়েছেন।

কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এবং শহরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মাসেদুল হক রাশেদ (৫২) র‍্যাব সদস্যদের হাতে আটক হন মঙ্গলবার সন্ধ্যায়। তিনি রাজধানী ঢাকা থেকে চিকিৎসা শেষে কক্সবাজার বিমান বন্দরে আসা মাত্রই র‍্যাব-১৫ এর সদস্যরা তাকে আটক করেন। কক্সবাজার জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো জসিম উদ্দীন চৌধুরী জানান, মাসেদুল হক রাশেদের বিরুদ্ধে দায়ের করা সুনির্দ্দিষ্ট অভিযোগের কোন মামলা না থাকলেও একটি হত্যা মামলার আসামি হিসেবে তাকে আদালতে চালান করা হয়েছে।

তিনি জানান, গত ৪ আগষ্ট কক্সবাজার জেলা শহরের ঘুন গাছতলায় বিএনপির মিছিলে গুলিবর্ষণের ঘটনায় নিহত একজন নিরীহ ব্যক্তির হত্যার ঘটনায় ১২ জন আওয়ামী লীগ নেতার নাম উল্লেখ পূর্বক এবং অজ্ঞাতনামা অনেকের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা রয়েছে। সেই মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে মাসেদুল হক রাশেদকে।

এলাকার লোকজন জানান, কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের দীর্ঘকালের সভাপতি এবং স্বাধীনতা পরবর্তি কক্সবাজার পৌরসভার প্রথম নির্বাচিত চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা একেএম মোজাম্মেল হকের জ্যেষ্ট পুত্র মাসেদুল হক রাশেদ। গেল বছরের জুন মাসে অনুষ্টিত কক্সবাজার পৌরসভার নির্বাচনে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী হিসাবে তিনি প্রতিদ্বন্ধিতা করেছিলেন। বিতর্কিত নির্বাচনী ফলাফলে তাকে পরাজিত করার অভিযোগ তুলেছিলেন তিনি। তাকে পরাজিত করার নেপথ্যে সেই সময় তিনি অভিযোগ করেছিলেন, ক্ষমতাচ্যুত সরকারের স্বল্প মেয়াদের মন্ত্রীপরিষদ সচিব কবির বিন আনোয়ারের বিরুদ্ধে। সেই থেকেই মাসেদুল হক রাশেদের প্রতি মানুষের ভক্তি ও ভালবাসা বেড়ে যায়।
কাল তাকে আটক করে আজ সকাল ১১ টার দিকে কোর্টে তুলার সিদ্ধান্ত থাকলেও আদালত প্রাঙ্গণে মাসেদুল হক রাসেদকে এক নজর দেখার জন্য নারী পুরুষের ব্যাপক উপস্থিতির কারণে কয়েকদফা এ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা হয়েছে। ১১টা থেকে ৩ টা পর্যন্ত প্রিয় নেতাকে দেখার জন্য ঠাঁই দাড়িয়ে ছিল শত শত মানুষ। পরে তাকে আদালতে তোলা হবে না বলেও জানানো হয়। মানুষের সংখ্যা কমার পর তাকে আদালতে আনা হয়। তারপরও সেখানে মানুষের ভীড় ছিল চোখে পড়ার মতো। যারা রাসেদের মুক্তি দাবী করে বিক্ষোভ করেছেন। অনেক নারী পুরুষকে বুক চাপড়িয়ে আহাজারি করতেও দেখা গেছে।
স্থানীয় লোকজনের মতে হত্যা মামলায় গ্রেফতার হওয়া কক্সবাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও আওয়ামী লীগের নেতা মাসেদুল হক রাশেদ একজন বিনয়ী, মানবিক এবং দানশীল মানুষ। এলাকার দরিদ্র মানুষকে তিনি নিরবে সাহায্য করেন। আয়েশা বেগম নামের একজন নারী এ প্রসঙ্গে বলেন, রাসেদ ভাই বিপদে-আপদে গরিবের সাহায্যে হাত বাড়াতে কৃপনতা করেননি কোন সময়। তিনি ‘ক্ষমতা দেখিয়ে’ কাউকে নির্যাতন করেননি।
উখিয়া উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান রাসেল চৌধুরী বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ নেতারা তাদের কৃতকর্মের ফল হিসেবে হেনেস্তার শিকার হলেও একই দলের অনুসারি মাসেদুল হক রাশেদের জন্য সাধারণ মানুষ আদালত প্রাঙ্গণে চোখের পানি ফেলছেন, যা এ সময়ে ব্যতিক্রম ঘটনা বলেও মন্তব্য করেন তিনি।